জাতীয়বিশেষ সংবাদ

দাম কমার অপেক্ষায় ক্রেতারা

জমে উঠেছে রাজধানীর সব থেকে বড় পশুর হাট। বিক্রিও বেড়েছে বেশ। সাধারণত ঈদের আগের দিন দেদারছে বিক্রি হয় কোরবানির পশু। এবার ক্রেতারা  বলছেন, কোরবানির পশুর দাম অত্যধিক বেশি। আর বিক্রেতারা বলছেন, পশুর খাবার বাড়তি দামে বিক্রি হওয়ায় বেশি দাম। ক্রেতারা অনেকেই যাচ্ছেন ঘুরে। তারা বলছেন, ঈদের আগের দিন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দাম কমার অপেক্ষা করবেন।

রাহেবুল ইসলাম লালমনিরহাট থেকে গরু এনেছেন ট্রাক ভর্তি করে। তারা ৪ জন মিলে এনেছেন ২৪টি গরু। রাহেবুুলের গরু ৮টি। সারা বছরে আদরে লালিত গরু আছে ৪টি আর বাকি ৪টি লালন করেছেন কয়েক মাস।

তিনি বলেন, আগে যে ভুসির বস্তা ছিল ৩০০/৩৫০ টাকা। সেই বস্তা এখন কিনতে হয় হাজার টাকায়। আগে বাড়ির বাইরে গেলেই ঘাস পাওয়া যেতো এখন চাষ করা লাগে। আবার গরুর নতুন এক রোগের সঙ্গে লড়াই করা লাগছে। গ্রামের অনেক গরুর এই রোগ হয়েছে। ডাক্তারের পিছনে প্রতিটা গরুর জন্য খরচ হয়েছে কয়েক হাজার টাকা। এখন ভালো দামে না বিক্রি হলে পথে বসতে হবে।
তিনি বলেন, আমার বড় গরু ৬টা, একেকটা ১০ মণের উপরে। দুটা ছোট গরু আছে ৪ মণের। গরু আনছি ৪ দিন আগে। আজকে একটা গরু বিক্রি হয়েছে ৯৭ হাজার ৫০০ টাকায়, আনুমানিক ওজন হবে ৩০০ কেজি। বড় গরুর দাম চাইছি ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা। মানিক নামে একটি গরু দেখিয়ে বলেন, এই গরু ১০ লাখ টাকা। এর ওজন আনুমানিক ৭০০ কেজি। কিন্তু মানুষ দাম বলে ৪ লাখ টাকা। এই টাকায় বিক্রি করলে আমার খরচের টাকাও হবে না।

রাহেবুলের মতো গরুর দাম নিয়ে অন্যান্য বিক্রেতারাও অস্বস্তিতে। তারা বলছেন, গরু পালনের খরচ বেশি। এজন্য দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। তারাও নিরুপায়।

আমেনা বেগমও এসেছেন একটি গরুর ট্রাকে। আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী এই নারীর তত্ত্বাবধায়নে বড় হয় দুটি গরু। পরম যত্নে গরু দুটি ৮ মাস ধরে পালন করেছেন তিনি। বিক্রির জন্য দিয়েও দিয়েছেন বড় ভাইয়ের হাতে। ভাইয়ের নাম মো. আলী। তিনি রাজধানীতে এনেছেন ১৮টি গরু। তার বোনের গরু দুটিও আছে এখানে। গত শনিবার থেকে তিনি গাবতলী হাটে। এখন পর্যন্ত ৪টি গরু বিক্রি হয়েছে। অবিক্রিত আছে বোনের গরু দুটি।

তিনি বলেন, বোনের গরু দুখ্যান ভালো দামোত বিক্রি হউক। এই গরু দুখ্যান ওর সউগ। তিনি আশা করেন, গরু দুটি আড়াই লাখ করে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। মিলবে সারা বছরের চলার রসদ। আজগর আলীর মতো অনেক বিক্রেতা গরু বিক্রির অপেক্ষায় থাকলেও গতকাল গাবতলী হাটে ক্রেতার সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। তবে বিকালে এ সংখ্যা বেড়েছে।
গতকাল গাবতলি হাটে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুর ১০ থেকে দুই ভাই এসেছেন গরু কিনতে। সকাল থেকেই শুধু দেখেই যাচ্ছেন গরু। আর ক্রেতা কম থাকায় রীতিমতো শুরু হয় ডাকাডাকি। দামাদামিও করছেন। তারা গরু কিনবেন দুটা। বলেন, এবারের গরুর দাম আগের বারের তুলনায় বেশি। তবে আজ গরু কিনবো না। আজ শুধু যাচাই করে যাবো। আগেরবার যে সাইজের গরুর দাম দেড় লাখ টাকা ছিল এবার দুই লাখ টাকা বলার পরও দিচ্ছে না।

একই কথা বলেন, আফনান নামে আরেক ক্রেতা। তিনি বলেন, আমার বাজেট দেড় লাখ টাকা। কিন্তু এই টাকায় যে গরু তা পছন্দ হচ্ছে না। আজ ফিরে যাচ্ছি। আশা করি শেষ দিনে দাম কমবে।
দু’টি গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন এক ক্রেতা। সবুজ নামের সেই ক্রেতা বলেন, একটা কিনলাম এক লাখ ২৬ হাজার টাকায়। আরেকটা এক লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, এবারের গরুর দাম বেশি। এক লাখ ২৬ হাজার টাকায় কেনা গরু দেখিয়ে বললেন, এর আগের ঈদে এই গরু পাওয়া গেছে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। আর এক লাখ ৭৫ হাজার টাকার গরুটি এবার নিতে হয়েছে মিনিমাম ৪০ হাজার টাকা টাকা বেশি দিয়ে।

হাটে আদর নামে একটি গরু বিক্রি হয় তিন লাখ পাঁচ হাজার টাকায়। বেশ সতর্ক ব্যবসায়ীরা। তারা বেশ সময় নিয়ে গুনে নিলেন টাকা। একই টাকা গুনে আবার আরেকজন ব্যবসায়ী ফের পরখ করায় ব্যস্ত। কথা হয় গরু ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি এসেছেন ফরিদপুর থেকে। দুইজন ব্যবসায়ী নিয়ে এসেছেন ২৩টি গরু। ৬ দিন ধরে তারা এই হাটে। সবুজ মিয়া জানান, এখনো মানুষ অধিকাংশই দেখছেন। কিনছেন না। রোববার গরু বিক্রি হয়েছে ৩টি। আর গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে একটি।
গরুর দাম নিয়ে বলেন, আদরের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। কিন্তু আমরাতো চলতে পারি না। গরু লালন-পালন করা কঠিন কাজ হয়ে গেছে। গরুর খাবারের দাম ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়েছে। আদরের ক্রেতা বলেন, এই গরু আগের ঈদে বিক্রি হইছে আড়াই লাখ টাকায়।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট গরুর চাহিদা বেশি। তবে ছোট গরু অনেক কম। অধিকাংশ মানুষ চাইছেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় গরু কিনতে। কিন্তু বাজারে কম মূল্যের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। ছোট গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়।
ছাগলের বাজারে গরুর থেকে ক্রেতা বেশি। এই বাজারেও দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখা মেলে। ছাগলের ক্রেতা বেশি হলেও গরুর থেকে কম বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে এই বাজারে মানুষ খুঁজছেন একটু বড় ছাগল। বাজারে অধিকাংশ ছাগল মাঝারি আকারের। দাম চাওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যেগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। আর ছোট ছোট ছাগলের দাম পড়ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ছোট ছাগল বাজারে একেবারেই কম। কালো ছাগলে ছেয়ে গেছে বাজার। তবে অন্য রংয়ের ছাগলের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বেশি মানুষ।

সাইফুল ইসলাম, বাড়ি চাঁদপুরে। প্রতিবছর বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করেন বাড়িতে। তবে বাবা-মা হজে যাবার কারণে রাজধানীতে ঈদ করছেন তিনি। বলেন, গরু প্রতিবার কোরবানি দেয়া হয়। এবার বাবা-মা না থাকায় ঢাকায় ঈদ করবো। ছাগল কিনবো ঝামেলামুক্ত থাকার জন্য।

এ হাটে আসা ‘বাহাদুর’ নামের একটি গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ১৮ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত বলা হয়েছে। তবে দেননি গরুটির মালিক। এই গরুটির সঙ্গে দেয়া হবে একটি কাশ্মিরি ছাগল বিনামূল্যে। আবার লালু, কালু, সম্রাটের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। লালু এসেছে মানিকগঞ্জ থেকে। দাম বলা হয়েছে ৮ লাখ। কালু পালিত হয়েছে সিরাজগঞ্জে। তার দাম বলা হয়েছে ৬ লাখ। আর সম্রাটের দাম ৫ লাখ। আবার বাহারি এক গরু নজর কাড়ছে সবার। আরেকটি গরুর নাম বডি বিল্ডার। নামের সঙ্গে মিল আছে গরুর আকারের। ছোট আকারের সাদা গরুটির গায়ে যেন মাংস এঁকে দেয়া হয়েছে। আর প্রিন্স ও আলিশান নামে দুটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা করে। এগুলোর দাম বলা হয়েছে ১২ ও ১৫ লাখ টাকা। এই গরুগুলোর ক্রেতার থেকে দর্শক বেশি। অনেকেই তুলছেন ছবি, করছেন ভিডিও। আর ১২ থেকে ২০ লাখ টাকা করে চাওয়া হচ্ছে বেশ কয়েকটি গরুর। এগুলোর নাম প্রিন্স, যোদ্ধা, রক্ত, নিশান, ডরা ইত্যাদি। বাজারে বেশ কয়েকটি বিশালদেহী মহিষও উঠেছে। এগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। মরুর প্রাণী উটও শোভা বাড়াচ্ছে বাজারে। বড় পশুর বিক্রি একেবারেই কম। বিক্রেতারা আশাবাদী ঈদের আগেই বিক্রি হবে তাদের সব গরু।

আরও সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker